Sunday, November 24, 2019

দেশে বীমা গ্রহীতার হার বেড়েছে:আইডিআর


বীমা বার্তা ডেস্ক: বীমা ব্যবসার প্রসার গ্রস প্রিমিয়ামের উপর নির্ভর করে। বীমা গ্রাহক বৃদ্ধি পেলে গ্রস প্রিমিয়াম বৃদ্ধি পায়। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) প্রতিবেদন অনুসারে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশে বীমা গ্রহীতার হার বেড়েছে। ফলে বীমা ব্যবসার প্রসারও হয়েছে। এ কারণে আত্মতুষ্টিতে ভুগছে আইডিআরএ। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগের কাছে পাঠানো বীমা খাতের অগ্রগতি ও সাফল্য প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। ওই প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশিয় লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। আগের বছরেও কোম্পানিটি ১ হাজার ১২ কোটি ৪ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে শীর্ষ অবস্থানে ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকদের বীমা দাবির প্রেক্ষিতে নিষ্পত্তির হারও বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীমা দাবি নিষ্পত্তির হার সন্তোষজনক। কেননা অর্থের পরিমাণে তা বেড়েছে। বীমা শিল্পের অন্যতম দক্ষতার সূচক বীমা দাবি পরিশোধের হার।বর্তমানে বীমা পরিশোধের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছ।গত বছর (২০১৮) বীমা পরিশোধের গড় হার ছিল ৯০.৭৭%, যা আগের বছরে ছিল ৮২.৯৭%।

আইডিআরএ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে গ্রাহকের দাবির প্রেক্ষিতে বীমা দাবি পরিশোধের হার ছিল ৫৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বীমা দাবি পরিশোধের হার ছিল ৭২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। শেষ পর্যায়ে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে বীমা দাবি পরিশোধের হার ৬২ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

বিবি/ এএইচ

Saturday, November 23, 2019

এক নজরে শীর্ষ ৬টি জীবন বীমা কোম্পানির অবস্থা

বীমা বার্তা ডেস্ক:বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো কোম্পানি আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ বা সংক্ষেপে আলিকো।এই আলিকোরই একটি শাখা মেটলাইফ।তবে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আলিকো কর্মরত থাকলেও এরপর থেকে দৃশ্যপটে দেখা যায় মেটলাইফকে।যাইহোক, আমেরিকান এই কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে ১৯৫২ সাল থেকে।সে হিসেবে এই কোম্পানির বয়স দাঁড়িয়েছে ৬৭ বছর।এই দীঘ সময়ে কোম্পানিটি  শহরাঞ্চলে তাদের ব্যবসার পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ১ম বছর প্রিমিয়াম অর্জন করেছে ৫৫০ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা এবং আগের বছর এই খাতে অর্জন ছিল ৫৩৮ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা।২০১৮ সালে গ্রস প্রিমিয়াম অর্জন করেছে ২৬৬৪.১০ কোটি টাকা।তবে ব্যবসার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সফল হলেও এই বিদেশি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হচ্ছে ব্যবসায়ের অসচ্ছতা। তারা গ্রাহকদেরকে ঠকিয়ে থাকে এবং বীমা দাবি পূরণে গড়িমসি করে।তারা গ্রাহকদেরকে কী ধরনের বোনাস সুবিধা প্রদান করবে বা করে থাকে তা গোপন রাখে।বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব কোন সম্পদ নেই, লাভের পুরো টাকাই আমেরিকায় চলে যায়।সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষ (IDRA) গ্রাহকদের বীমা দাবীর নিষ্পত্তি না করার কারণে যে ১৪টি কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে তাদের মধ্যে মেটলাইফও রয়েছে।
জীবন বীমা কর্পোরেশন (জেবিসি) বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা কোম্পানি, যা ১৯৭৩ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় রাষ্ট্রপতির আদেশে সুরমা ও রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে হিসেবে প্রথম প্রজন্মে এই কোম্পানির বয়স সাড়ে ছিচল্লিশ বছর। কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণ হলো - ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে ২১০৭.৩৮ কোটি টাকা।২০১৭ সালে সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২০৩০ কোটি টাকা।২০১৮ সালে লাইফ ফান্ড ছিল ১৯২৮ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিল ১৮৫২ দশমিক ২৯ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড ১৯৮৫ সালে যাত্রা শরু করে। বর্তমানে কোম্পানির বয়স ৩৪ বছর।২০১৮ সালের হিসেব অনুসারে ন্যাশনাল লাইফের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪২৭৬.৬৮ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে সম্পত্তি ছিল ৪১০৮.৪৫ কোটি টাকা।লাইফ ফান্ড ২০১৮ সালে ৩৪৪০.৩৭ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ছিল ৩২৯০.৭৭ কোটি টাকা।কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম অর্জন করে ২৫০.৫৩ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ২১৭.৪৭ কোটি টাকা।এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল ২০১৮ সালে ১১০.২৫ কোটি এবং আগের বছর ছিল ৮৩.৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি গ্রস বা মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ৯৬১.৯১ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ৮৭১.১১ কোটি টাকা।

প্রথম প্রজন্মের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে ডেল্টা লাইফ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে।সে হিসেবে কোম্পানিটির বয়স ৩৩ বছর।২০১৮ সালে ডেল্টার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪৩৯৮.৭৮ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪৩৭৩ কোটি টাকা।প্রবৃদ্ধি ২৫.৫৪ কোটি টাকা।লাইফ ফান্ড (২০১৮ সালে) ৩৮২৮.৮৯ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ৩৬৭৪.২২ কোটি টাকা।বিগত বছরে কোম্পানিটির ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল১৩৯.৫১ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৩১.৬৭ কোটি টাকা।দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল ২০১৮ সালে ১০৯.১৯ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৭৭.৮১ কোটি টাকা।কোম্পানিটি ২০১৮ সালে গ্রস প্রিমিয়াম অর্জন করেছিল ৬৬৪.০০ কোটি এবং ২০১৭ সালে ৬২৫.১০ কোটি টাকা।

উপরোক্ত চার কোম্পানির তুলনায় প্রগতি লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বয়স তুলনামূলকভাবে অনেক কম।এই চারটি কোম্পানিই প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে।প্রগতি জানুয়ারীতে, ফারইস্ট মে মাসে, প্রাইম জুলাই মাসে এবং পপুলার সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।তবে ব্যবসায়িক অগ্রগতির দিক থেকে দেশীয় সকল কোম্পানিকে ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ, পপুলার লাইফ ও ডেল্টা লাইফ।

দেশিয় ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। আগের বছরেও কোম্পানিটি ১ হাজার ১২ কোটি ৪ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ৩৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে দ্বিতীয় অবস্থানে, ২য় বর্ষ প্রিমিয়ামে (১৯৫.১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে) প্রথম অবস্থানে, লাইফ ফান্ডের দিক থেকে ৩য় অবস্থানে (৩৩৩০.৪৩ কোটি) এবং সম্পদের দিক থেকেও ৩য় অবস্থানে রয়েছে কোম্পানিটি।২০০৫ সালে পূঁজিবাজারে তালিকাবদ্ধ হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই প্রথম থেকেই এ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে এবং শেয়ার হোল্ডারদেরকে নিয়মিত আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ট দেয়ার পাশাপাশি পলিসি হোল্ডারদেরকেও নিয়মিত আকর্ষণীয় বোনাস দিয়ে আসছে। পূঁজিবাজারে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৭৪.৭৪২ কোটি টাকা।২০১৮ সালে লাইফ বীমায় কোম্পানিটির মার্কেট শেয়ার ১১.৭৪ শতাংশ, আর প্রবৃদ্ধি ৪.৬২ শতাংশ। কোম্পানির আর্থিক ভীতও অত্যন্ত শক্তিশালী।মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২০৫.৫৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ৫৫৯ কোটি ৬ লাখ টাকা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। এর আগে ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। অর্থাৎ নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহে কোম্পানিটির প্রবৃদ্ধি ১০২.৮৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে পপুলার লাইফ ৮০৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৬০.৪২ শতাংশ।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের তথ্যের ভিত্তিতে লাইফ বীমাকারীর ব্যবসার দক্ষতা মূল্যায়ন শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।






Thursday, November 21, 2019

২০১৮ ও ২০১৭ সালে গ্রস প্রিমিয়ামে শ্রেষ্ঠ ৪টি কোম্পানি:

বীমা বার্তা ডেস্ক: ১.ফারইস্ট ইসলামী লাইফ: ২০১৮ সালে ১০৫৮.৭৮ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১০১৫.৪৪ কোটি টাকা; ২.ন্যাশনাল লাইফ: ২০১৮ সালে-৯৬১.৯১ কোটি, ২০১৭ সালে ৮৭১.১১ কোটি; ৩.পপুলার লাইফ: ২০১৮ সালে-৮০৩.৯৮ কোটি, ২০১৭ সালে ৫০১.১৬ কোটি; ৪.ডেল্টা লাইফ:২০১৮ সালে-৬৬৪.০০ কোটি, ২০১৭ সালে ৬২৫.১০কোটি।

সূত্র: উত্তমাশা
বিবি/ এএইচ

Tuesday, November 19, 2019

বীমা করার আগে সঠিক বীমা কোম্পানি ও বীমা পরামর্শক নির্বাচন জরুরী


মুহাম্মদ আবুল হুসাইন: বীমা করার আগে সঠিক বীমা সেবা ও কোম্পানি নির্বাচন করা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।সঠিক কোম্পানি নির্বাচন কয়েকটি বিষয়ের উপর একান্তভাবে নির্ভর করে।যেমন:

১। কোম্পানীর সুনাম: কোন বীমা কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত হবার আগে তার উপর সঠিক অনুসন্ধান প্রয়োজন।আর এর জন্য সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছ থেকে খোঁজ-খবর নেয়া।কারণ, কোন বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কোন অভিযোগ থাকলে তারা সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছেই তাদের অভিযোগ পেশ করে থাকে।তাই এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিই বলতে পারবে কোন কোম্পানি কতটুকু ভাল বা খারাপ।তাছাড়া আইডিআরএ যেহেতু বীমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে কারণে এই সংস্থার ওয়েব সাইটে গেলে আপনি বিভিন্ন কোম্পানি সম্পর্কে তাদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ ও মতামতও জানতে পারবেন।যেমন অনেক বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে যে, তারা গ্রাহকদের বীমা দাবী পরিশোধ করতে গড়িমসি করে থাকে।এসব অভিযোগের মাত্রা অনুসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সম্প্রতি অভিযুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে এবং তাদেরকে গ্রাহকদের দাবি পূরণে বাধ্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে।আপনি সেই তালিকা থেকে সহজেই সতর্ক হতে পারেন।পাশাপাশি ভাল কোম্পানিগুলোর তালিকা বা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কোন কোন কোম্পানি সেটিও আপনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে জানতে পারবেন।পাশাপাশি বীমা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থাও শীর্ষ কোম্পানিগুলোর অবস্থান মূল্যায়ন করে থাকে।আপনি গুগলে সার্চ করলেও বাংলাদেশের শীর্ষ বীমা কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা পেয়ে যাবেন।

২। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা: যদি বীমা সংস্থার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকে, তবে আপনার বীমা দাবিটির বিপরীতে তারা অর্থ প্রদান করতে পারবে না। অতএব, সঠিকভাবে অর্থ সরবরাহ করতে পারে এমন কোম্পানিগুলি নির্বাচন করতে হবে।এক্ষেত্র কোন কোম্পানির লাইভ ফান্ড (রিজার্ভ ফান্ড), সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদিও বিবেচনায় নিতে পারেন। ভাল আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন কোম্পানি বেছে নেয়ার সময়ে তাদের আর্থিক স্টেটমেন্ট এবং তাদের আর্থিক প্রবিদ্ধির হার নির্ণয় করা উচিত।কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ওয়েব সাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ ব্যাপারে রিসার্চ করা খুবই সহজ। বিভিন্ন অনলাইন রিভিউ, রেটিং এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৩। বৈধ স্বীকৃতি: বীমা কোম্পানি নির্বাচন করার সময় তার কোন বৈধ স্বীকৃতি এবং পূঁজিবাজারে সেটি তালিকাভুক্ত কি না, শেয়ার হোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ দিচ্ছে কিনা
ইত্যাদি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এসব থেকেই আপনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন কোম্পানিগুলো কতটা শক্তিশালী, স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য এবং দায়বদ্ধ।

৪। গ্রাহক সেবা: একটি জীবন বীমার গ্রাহক সেবা হবে স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য। কোম্পানী তাদের গ্রাহক পরিসেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের যে কোন তথ্য কিংবা সমস্যার দ্রুত সমাধান করে দিতে পারে। তাই, বীমা কোম্পানি বাছাইয়ে ভাল গ্রাহক সেবা দেয়া বীমা কোম্পানিকে প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়।

৫। সহজ যোগাযোগ: বীমা কোম্পানিগুলি আপনার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করে তা তাদের সেবা নেবার আগেই যাচাই করতে হবে। তারা নির্ভরযোগ্য কিনা বা তাদের সাথে যোগাযোগ করা সহজ কিনা তা তাদের অনলাইন বিল পেমেন্ট, গ্রাহক পরিসেবা এবং সামাজিক মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সহজেই যাচাই করা যায়।

৬। প্রিমিয়াম: বীমা সেবার প্রিমিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার! এটি আপনার আর্থিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
কোন বীমা কোম্পানি যদি সাশ্রয়ী বীমা প্রিমিয়াম প্রদান করে তবে এর অর্থ এই নয় যে তাদের সার্ভিস ভাল হবে না। তাই, বীমা সেবা নেবার আগে বিভিন্ন কোম্পানির প্রিমিয়াম প্যাকেজ সম্পর্কে রিসার্চের মাধ্যমে ভাল ধারণা রাখতে হবে।

৭। কাভারেজ: একটি ব্যয়বহুল বীমা যে আপনাকে সবসময় বিস্তৃত কভারেজ সরবরাহ করবে এ ধারণা ভুল। এ কারনে আপনার বীমা কোম্পানির বীমা কভারেজ রেঞ্জ সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার আর্থিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সেরা কভারেজটি পছন্দ করুন যাতে এটি আপনার এবং আপনার পরিবারের বাজেটে কোন সমস্যা না করে।

৮। সম্পুর্ন ডিসক্লোজার: যেসব বীমা কোম্পানি আপনাকে তাদের পলিসি ও শর্ত সম্পর্কে অন্ধকারে রাখে সেসব কোম্পানি থেকে দূরে থাকাই উত্তম। বীমা সেবা নেবার আগে নিশ্চিত করা দরকার যে সংস্থাটি সম্পূর্ণরূপে তাদের সমস্ত আইনি এবং আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা এবং শর্তাবলী আপনাকে পরিষ্কার করে জানিয়েছে। একটি ভাল বীমা তাদের আইনি এবং আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সবসময় গ্রাহকের কাছে স্বচ্ছ থাকবে।

৯। ডিসকাউন্ট: ডিসকাউন্ট আপনার বীমা সেবা নেবার ক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে আপনার বীমা সেবায় কী ধরণের ডিসকাউন্ট কাজ করবে সে সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত। আমাদের দেশে প্রিমিয়ামের উপরে কখনই কোন ডিস্কাউন্ট প্রদান করা হয় না। তবে বীমা কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপে জড়িত অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন হোটেল, শপিং মল, রেস্টুরেন্টসহ নানান প্রকার প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে ডিস্কাউন্ট অফার করা হতে পারে। তবে, এ সকল ডিস্কাউন্টে বিহ্বল না হয়ে বীমা কোম্পানির অন্যান্য বিষয় যেমন প্রিমিয়ামের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।

১০। বীমা ক্লেইম পেমেন্ট: বীমা কোম্পানির বীমা ক্লেইম পেমেন্ট রেকর্ড সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। একটি কোম্পানির বীমা ক্লেইম পেমেন্টের আগের রেকর্ড সম্পর্কে পর্যাপ্ত খোঁজখবর নিতে হবে। নির্ভরযোগ্য যেকোন বীমা কোম্পানির বীমা ক্লেইম রেকর্ড অত্যন্ত ভালো থাকে। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্লেইম পরিশোধ করা কোম্পানি বাছাই করা উচিত।

১১। পরামর্শ নিন কাছের মানুষের কাছ থেকে: আপনার পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকেও বীমা কোম্পানি সম্পর্কে পরামর্শ নিতে পারেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বীমা সেবা ও কোম্পানি সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ সরবরাহ করতে পারে। সঠিক বীমা বাছাই করার ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে নেয়া পরামর্শ অত্যন্ত মূল্যবান হবে।

১২।দূরত্ব ও সম্পর্ক নয়, সিদ্ধান্ত নিন সঠিক বিবেচনায়: অনেক সময় কোম্পানির অফিসের দূরত্ব কিংবা বীমাকর্মীর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে অনেকে বীমা করে থাকেন, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।বীমা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, এখানে আবেগের চেয়ে সঠিক বিবেচনাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত।জানাশোনা, বোঝাপড়া ও সঠিক বিবেচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।সেক্ষেত্র সঠিক বীমাকর্মী যদি অনেক দূরেও অবস্থান করেন সেটা কোন ব্যাপার নয়।তাছাড়া এখন শীর্ষ বীমা কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড।আপনি সঠিক বীমা কর্মীর মাধ্যমে সে কোম্পানির যে কোন শাখায় পলিসি করে আপনার সুবিধা অনুযায়ী সেই কোম্পানির যে কোন শাখায় পলিসি জমা দিতে পারবেন।এমনকি ঘরে বসে মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমেও পলিসি জমা দিতে পারবেন।

সুতরাং দূরত্ব ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, বীমা করুন সঠিক কোম্পানি ও সঠিক বীমাকর্মী বা পরামর্শকের মাধ্যমে।

Thursday, November 14, 2019

সিটি ব্যাংকের অনলাইন সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে প্রোটেক্টিভ ইন্সুরেন্স


বীমা বার্তা ডেস্ক: প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্স এখন থেকে সিটি ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন ও স্বয়ংক্রিয় পেমেন্ট সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।

গত ৫ নভেম্বর এ বিষয়ে সিটি ব্যাংক ও প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের হেড অফ ডিজিটাল ফাইন্যান্স সার্ভিস মোহাম্মদ জাফরুল ইসলাম এবং প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ড. কিশোর বিশ্বাস নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের হেড অফ মার্চেন্ট এন্ড ই-কমার্স বিজনেস আরিফুর রহমান, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের হেড অফ আইসিটি কাজী হানিফসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ।

বিবি/এএইচ

Wednesday, November 6, 2019

লাইফ ইন্স্যুরেন্স করার গুরুত্ব


বীমা বার্তা ডেস্ক: আপনি হয়তো ভাল চাকরি বা ব্যবসা করছেন।দিনরাত পরিশ্রম করছেন।কারণ আপনি চান আপনার পরিবার যেন স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে। তাদের কোন প্রয়োজন যেন অপূর্ণ না থাকে।আপনি আপনার সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তা করেন।প্রত্যেক বাবাই তা করে থাকেন।আপনার বাবা করেছিলেন, আপনার দাদা করেছিলেন।প্রতেক বাবাই সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন।‘‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’’ বলেছিলেন কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।সেই মধ্যযুগে।সন্তানের প্রতি বাবা-মার এই আশীর্বাদ চিরন্তন।

কিন্তু আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার জীবনে কোন বিপদ-মুসিবত-দুর্ঘটনা আসবে না? আপনার এই স্বচ্ছলতা সব সময়ই নির্বিঘ্ন থাকবে, তাই আপনার কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই, সঞ্চয়ের প্রয়োজন নেই কিংবা ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই?

আপনি যদি একজন দায়িত্বশীল পিতা, স্বামী বা অভিভাবক হন, তাহলে আপনার অবশ্যই সঞ্চয়ের পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলার পরিকল্পনা করা উচিত।কারণ বিপদ কখনো বলে আসেনা।এমনকি আপনার বৃদ্ধ বাবা, মা এমনকি নিকটাত্মীয়দের কথা চিন্তা করেও আপনার ঝুঁকি এড়ানো উচিত।এক্ষেত্রে আপনাকে সাপোর্ট দিবে জীবনবীমা।জীবন বীমা একদিকে একটি দীর্ঘ মেয়াদ সঞ্চয়, অন্যদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার গ্যারান্টি।

আপনি যদি কর্মজীবনে প্রবেশ করেই একটি দীর্ঘ মেয়াদী বীমা করেন, তাহলে মেয়াদ পূর্তির পর তা আপনার হাতে একটি বড় ধরনের মূলধন তুলে দিবে।কিন্তু আল্লাহ না করুন আপনি যদি কোন দুর্ঘনায় পড়ে পঙ্গু বা অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন আর কেউ এগিয়ে না আসলেওআপনার বিপদের বন্ধু হয়ে বীমা কোম্পানি ঠিকই এগিয়ে আসবে।আপনি যদি আপনার সামর্থ অনুযায়ী ১০, ২০ বা ৫০ লাখ বা এক কোটি টাকার একটি জীবনবীমার পলিসি করে করে মাত্র একটি প্রিমিয়াম দিয়েও দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে স্থায়ীভাবে হয়ে যান, তখন আপনাকে আর কোন প্রিমিয়াম দিতে হবে না এবং জীবন বীমা কোম্পানি সরকার নির্ধারিত বীমা আইন অনুসারে আপনাকে পূর্ণ

মেয়াদের বীমা অংক প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।আর যদি দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হয়, তাহলে বীমা অংকের দ্বিগুণ অর্থ - ১০ লক্ষ টাকার পলিসি করলে ২০ লক্ষ টাকা বা ৫০ লক্ষ টাকার বীমা করলে ১ কোটি টাকা আপনার পরিবারকে প্রদান করা হবে।

আর আল্লাহ না করুন, মেয়াদ পূর্তির আগে, এমনকি একটি কিস্তি দিয়েও যদি স্বাভাবিকভাবেও মারা যান, তাহলেও আপনি বেঁচে থেকে মেয়াদ পূর্ণ করলে যেভাবে বোনাসসহ পূর্ণ মেয়াদের বীমা অংকের টাকা ফেরত পেতেন; জীবনবীমা কোম্পানি আপনাকে সে পরিমাণ অর্থ আপনার পরিবারের মনোনীতককে প্রদান করবে।

আপনি প্রতিদিন যে হোন্ডায় বা গাড়িতে চড়ে অফিসে বা ব্যবসায় কেন্দ্রে যান সেই হোন্ডা বা গাড়িটির বীমা করতে আপনি ভুলেননি।কিন্তু আপনি আপনার নিজের জীবন বীমা কি করেছেন?

আপনি একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার অবর্তমানে, আপনি যদি পৃথিবীতে না থাকেন, তাহলে আপনার পরিবার, আপনার সন্তানের জীবন কি একই ভাবে চলবে? তাদের আর্থিক অবস্থা কি একই রকম থাকবে? আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন। আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের জন্য আপনি কোন ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেছেন? আপনি সুস্থ্য থাকলে কর্মঠ থাকলে হয়তো তাদের জীবন সুন্দরভাবে চলবে কিন্তু আপনি যদি না থাকেন তাদের জীবন কিভাবে চলবে?

অনেকে শুধু নিজের জীবনকালীন সময়টাকে নিয়েই ভাবে।আপনার মৃত্যু যে আপনার পরিবারের- আপনার শিশু সন্তান, আপনার স্ত্রী, আপনার বৃদ্ধ বাবা-মার জীবনেও যে অন্ধকার নেমে আসতে পারে তা কি আপনি ভেবেছেন?

এ কারণেই বলা হয়, বীমা করাটা আসলে একটি মহৎ কাজ; কারণ এটি সাধারণ নিজের জন্য করা হয় না, এটি করা হয় নিজের পরিবারের জন্য, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার পরিজনদের জন্য।যারা নিতান্তই আত্মকেন্দ্রিক ও অদূরদর্শি তাদের পক্ষে বীমা করা কঠিন।কিন্তু যারা দয়ালু, দূরদর্শী ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী, যারা তাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই পরিবারের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে জীবনবীমা করবেন।

মহানবী (সা.) মানব জীবনের ৫টি অবস্থাকে ৫টি বিপরীত অবস্থার পূর্বে কাজে লাগানোর উপদেশ দিয়েছেন।এগুলো হলো: বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে; অসুস্থতা আসার আগে সুস্থতাকে; দারিদ্রতা আসার আগে স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্ততা আসার আগে অবসর সময়কে এবং মৃত্যু আসার আগে জীবনকে।

আল্লাহর রাসূলের উপরোক্ত উপদেশ পালনের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ কল্যাণ নিহিত।যেমন:

১. বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে কাজে লাগানো:

প্রথমত: স্বাস্থ্যগত দিক- যৌবনের যত্ন নিতে হবে, তাহলে বার্ধক্য সময়ে সুস্থ থাকা যাবে।

দ্বিতীয়ত: অর্থনৈতিক দিক: এ সময়ে মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ পায়, যার কারণে চাকরি-বাকরি থেকে অবসর নিতে হয় এবং আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়।তাই বৃদ্ধ বয়সে যাতে সন্তানদের উপর নির্ভর করতে না হয় তার ব্যবস্থা যৌবনকালেই করা উচিত।অর্থাৎ কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর থেকেই বৃদ্ধকালের জন্য কিছু কিছু সঞ্চয় করতে থাকুন যাতে বৃদ্ধ কালে কারো কাছে হাত পাততে না হয়।আর এর জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো পেনশন বীমা।

বিশ বছর বয়স থেকেই এটি চালু করা যায়, আর ৫০ বছর বয়স থেকেই মাসে মাসে পেনশন ভোগ করা যায়।

২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে কাজে লাগানো:

খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, পরিবেশ দুষণ ইত্যাদি কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।আমাদের দেশে প্রতি বছর ২ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে দেড় লাখ-ই মারা যায়। কিডনি রোগও বাড়ছে। এছাড়া মানুষের জীবনে জটিলতা, অস্থিরতা বাড়ার কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ছে।আর একটি পরিবারের কোন সদস্য যখন এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তখন ঐ পরিবারটিও কিন্তু আর্থিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়ে যায়। তাই সুস্থ্ থাকা অবস্থাতেই এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিন। একটি জীবনবীমা এক্ষেত্রে একটি ভাল অবলম্বন হতে পারে।

৩. দারিদ্রতা আসার আগে স্বচ্ছলতাকে কাজে লাগানো: সুসময়ের সঞ্চয় দুঃসময়ের অবলম্বন।

৪. ব্যস্ততা আসার আগে অবসর সময়কে: 

তারুণ্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে সোনালী সময়। জ্ঞান আহরণ, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের জন্য এটিই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।অথচ এই সময়টাকেই সবচেয়ে বেশি অপচয় করা হয়।জীবনের সঠিক পরিকল্পনা না থাকা এবং সময় ব্যবস্থাপনার অভাবেই এটি হয়ে থাকে।

৫.মৃত্যু আসার আগে জীবনকে: 

জীবন কোন তামাশার বিষয় নয়।সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জীবনকে কর্মমূখর ও দামি করে তুলতে হবে।শুধু দুনিয়া নয়, আখেরাতের কামিয়াবির জন্যও আপনাকে কাজ করতে হবে দুনিয়াতেই।আর এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।আপনি হয়তো দুনিয়ায় অনেক ধন-সম্পদ রেখে যেতে পারেন; যা হয়তো আপনার সন্তানরা বংশ পরম্পরায় ভোগ করেও শেষ করতে পারবে না।আপনার রেখে যাওয়া সম্পদ আপনার সন্তানরা ভাল কাজেও লাগাতে পারে যা আপনার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করবে।আবার সন্তানরা যদি যথার্থ মানুষ না হয় তাহলে কিন্তু উল্টোটাও করতে পারে।তাই জীবিত থাকতেই আপনার এমন কিছু জনহিতকর কাজ করে যাওয়া উচিত যা আপনার মৃত্যুর পর সদকায়ে জারিয়া হিসেবে জারি থাকবে।

কিন্তু জীবিত অবস্থায় আপনার যদি বড় কোন জনহিতকর কাজ করার সামর্থ না থাকে তাহলে আপনি ইচ্ছে করলে কোন সমাজসেবামূলক বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান করার জন্য একটি স্বল্প প্রিমিয়ামের মুনাফা বিহীন দীর্ঘ মেয়াদী বীমা করতে পারেন, যা শুধু আপনার মৃত্যু ঝুঁকি কাভার করবে।এক্ষেত্রে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তালিকা-১৮ মেয়াদী বীমা করতে পারেন, যা আপনার মৃত্যুর পর প্রদেয় বীমা অংক দ্বারা আপনার সন্তানগণ বা মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জনহিতকর কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।

মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধে জীবনবীমার ভূমিকা

আপনি হয়তো কোন কারণে (ব্যবসায় লোকসান, বাড়ী করা, ব্যাংকে বন্ধক, চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি) বড় ধরনের ঋণ রেখে মারা গেলেন, যা আপনার পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে।দেখা গেলো, আপনার পরিবার আপনাকে আর ঋণমুক্ত করতে সক্ষমই হলো না; ফলে আপনি মৃত্যুর পরও ঋণগ্রস্থই থেকে গেলেন; যা আখেরাতে আপনার জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।কারণ, আল্লাহ হয়তো আপনার সব গুনাহ মাফ করবেন, কিন্তু ঋণ মাফ করবেন না।কারণ ঋণ বান্দার হক।যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা (অর্থাৎ যার হক আপনি নষ্ট করেছেন) আপনাকে মাফ না করবে ততক্ষণ আল্লাহও আপনাকে মাফ করবেন না।আর, বলাই বাহুল্য কিয়ামতের কঠিন সময়ে কেউ তার হক ছাড়বে না, সবাই তখন নিজের মুক্তি কামনা করবে।তখন পাওনাদারকে আপনার পূণ্য দিয়ে ঋণ শোধ করতে হবে।আর আপনার যদি পূণ্য না থাকে, তখন পাওনাদারের গোনাহ’র বোঝা আপনাকে বহন করতে হবে, যা হবে এক ভয়াবহ ব্যাপার।

তাই, আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবার যাতে সহজেই আপনার ঋণ পরিশোধ করতে পারে তার একটা ব্যবস্থা আপনার করা উচিত।এক্ষেত্রে একটি জীবন বীমা পলিসি আপনাকে ঋণমুক্ত করতে সহায়তা করতে রাখতে পারে বিরাট ভূমিকা।সুতরাং, আপনার বয়স যদি ৪০’র কোঠায় পৌঁছে যেয়ে থাকে, তাহলে আর দেরি না করে আজই একটি বীমা করে ফেলুন।

জীবন বীমা সঞ্চয় ও ঝুঁকি মোকাবেলার সুবিধা ছাড়াও ঋণ সুবিধাও প্রদান করে থাকে। যখন অন্য কোন প্রতিষ্ঠান আপনাকে লোন দিবে না, তখন জীবন বীমাতে আপনার জমাকৃত টাকার উপর ঋণ সুবিধা এবং আপদকালীন সময়ে আর্থিক সুবিধা পাবেন।

সন্তানের শিক্ষা ও বিবাহ:

‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ 
আজকের শিশুই আগামী দিনের নাগরিক।

শিশুর ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যেক বাবা-মা’রই একটি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে অনেক কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।

চিন্তা করুন তো, আজ যদি আপনার শিশুর বয়স এক বছর হয়, তাহলে ২০ বছর পর সে হবে একজন টগবগে তরুণ বা বা তরুণী।তখন তার চোখে-মুখে থাকবে কত স্বপ্ন, তাই না? সেটা হতে পারে উচ্চ-শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কিংবা বিদেশ যাত্রা, কিংবা কোন ব্যবসায়-উদ্যোগ কিংবা বিবাহ-সাদীর ব্যাপার।আর এসব কিছুর সাথেই কিন্তু এককালীন অনেকগুলো টাকা-পয়সার বিষয় জড়িত, যা ঐ সময় হয়তো আপনার পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব হবে না।

আবার এমনও তো হতে পারে, আপনার জীবনে ঘটে গেলো বড় কোন দুর্ঘটনা, কিংবা নিভে গেলো আপনার জীবন-প্রদীপ।তখন আপনার সন্তান, আপনার স্ত্রী-পরিজন-পরিবার- তাদের জীবনে নেমে আসবে ঘোর অমানিসা।আপনার সন্তান কি তখন তার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে? আপনার অবর্তমানে আপনার স্ত্রী সংসারকে কতটুকু সামাল দিতে পারবে? এমনও তো হতে পারে আপনি তাদের জন্য অবলম্বন হিসেবে কোন কিছুই করে যেতে পারলেন না?

এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যই আমাদের রয়েছে আপনার শিশুর জন্য শিক্ষা ও বিবাহ বীমা।#

Friday, November 1, 2019

বীমা পেশা যে কারণে আকর্ষণীয়


বীমা বার্তা ডেস্ক: চাকরির বাজারে যখন হাহাকার অবস্থা, ঘুষ ছাড়া যেখানে মেধা মূল্যহীন হয়ে পড়ে, সেখানে বীমা খাতই একমাত্র ভরসার জায়গা যেখানে রয়েছে কর্মসংস্থানের অফুরন্ত সম্ভাবনা এবং এই সম্ভাবনার সুযোগ নিতে যেখানে কোন ঘুষ দিতে হয় না।বীমা পেশা একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্বাধীন ও মহৎ পেশা এবং এখানে রয়েছে সমাজসেবা করার, মানুষকে আর্থিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা এবং তাদের বিপদের সময় পাশে থেকে সাহায্য করার সুযোগের পাশাপাশি অল্প সময়ে দ্রুত পদোন্নতি ও সাফল্যের সম্ভাবনা।

এখানে এ পেশার আকর্ষণীয় দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

সমাজ সেবা:
একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট শুধু বিমা প্রোডাক্টই বিক্রি করেন না; তিনি গ্রাহকদের আর্থিক পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, তাদেরকে দূরদর্শী হতে এবং পরিবার ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে সচেতন হতে এবং সঠিক প্রোডাক্ট কিনতে ও বিমা পলিসি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার জন্য সঠিক সেবা প্রদান করেন। প্রয়োজনের সময়ে সঠিক বীমা পলিসির পরামর্শ প্রদান করে অ্যাসোসিয়েটরা গ্রাহকদের জীবনে আর্থিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়ার পাশাপাশি তাদের জীবনে নির্ভরতার একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।

সীমাহীন আয়ের সুযোগ: 
লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কোনো নির্ধারিত বেতন না থাকলেও আছে অফুরন্ত উপার্জনের সুযোগ। কারন এই ভুমিকায় আয়ের মাধ্যম হল পারফর্মেন্স নির্ভর কমিশন। আর কমিশন নির্ভর করে বিক্রয় করা বীমা পলিসির মেয়াদকাল, সুবিধা, ধরণ ও শর্তাবলীর উপর।

চলমান ও দীর্ঘমেয়াদী আয়: 
বীমা পলিসির ধরণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী একজন ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট ২৭ বছর পর্যন্ত নবায়নকৃত পলিসি থেকে কমিশন পেতে পারেন।একজন অ্যাসসিয়েট যদি কোম্পানি ছেড়েও দেন তবুও তিনি তার ইস্যুকৃত পলিসির উপর এই কমিশন পেতে থাকবেন।

ক্যারিয়ারে দ্রুত উন্নতি: 
তরুণ মেধাবীদের ক্যারিয়ারে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে বীমা কোম্পানি সহায়তা করে থাকে। আপনি মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট পদ থেকে ইউনিট ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পেতে পারেন। আর, ইউনিট ম্যানেজার থেকে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই। একজন অ্যাসোসিয়েটকে ভবিষ্যত নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জের জন্য গড়ে তুলতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা রয়েছে।

নিজস্ব কর্মঘণ্টা নির্ধারণের স্বাধীনতা: 
একজন অ্যাসোসিয়েটের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে নিজের কাজের সময় নির্ধারণ করার যা অ্যাসোসিয়েটদের নিজেদের কাজ ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এখানে অন্যান্য পেশাজীবীদের মত প্রতিটি কাজের জন্য পুরোপুরি অফিস ম্যানেজমেন্টের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় না। শুধুমাত্র এজেন্সি অফিসের আয়োজিত মিটিংগুলোতে অ্যাসোসিয়েটদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, কারণ এগুলো কর্মীদের নিজেদের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

তথ্য সূত্র: ইন্সুরেন্স বিডি নিউজ

Thursday, October 31, 2019

৩০ বছর বয়সের মধ্যে লাইফ ইনস্যুরেন্স করার ৭টি সুবিধা


বীমা বার্তা ডেস্ক: জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যেখানে এককালীন অর্থ বা নির্দিষ্ট সময়ান্তে কিস্তি পরিশোধের বিপরীতে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে অথবা নির্ধারিত বছরসমূহ শেষে বীমা কোম্পানি বৃত্তি অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জীবন বীমা সাধারনত নিজের আর্থিক সুবিধার জন্য নয়। বরং বীমা গ্রহীতার অবর্তমানে তার ওপর নির্ভরশীলদের জন্য আর্থিক সমর্থন যোগানোই জীবন বীমার মূল লক্ষ্য। তাই মানুষের আর্থিক জীবনযাত্রায় জীবন বীমা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক সংযোজন। জীবন বীমার অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে যা আপনার এবং আপনার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম। আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ আপনার নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারনে জীবন বীমা এক পথ প্রদর্শকের ভুমিকা পালন করে। একজন ব্যক্তি ৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করার মধ্যে নিজের ভবিষ্যৎকে অনেক জায়গায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিতেই এই লেখাটি-

১। দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় –

একজন যুবকের ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে গুছিয়ে তোলার যে পরিকল্পনা দরকার তা হতে হয় দীর্ঘ মেয়াদী। ৩০ বছর বয়সের মাঝে করা জীবন বীমা আপনাকে অর্থ সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় গড়ে তুলতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঞ্চয় উপাদানের জন্য এই বয়সটি একটি আদর্শ সময়, যা আপনার অবসর পরবর্তী জীবনের আর্থিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। এমনকি তা আপনার সন্তানের ভবিষ্যত লক্ষ্য পূরণের কাজেও আসবে। এভাবে ভবিষ্যত গড়তে জীবন বীমায় সুরক্ষা ও সঞ্চয় উভয় সুবিধাই ভোগ করা যায়। তাই ৩০ বছর বয়সের মাঝে গড়ে তোলা পরিকল্পনার প্রথম নির্দেশনের মাঝে অন্যতম হলো জীবন বীমা করা।

২। বিনিয়োগে রিটার্ন –

৩০ বছর বয়সের মধ্যে জীবন বীমা হতে পারে একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত কারন জীবন বীমা আপনাকে যুবক বয়স থেকেই দীর্ঘমেয়াদী নিশ্চিত নিরাপত্তা প্রদান করে। জীবন বীমায় বীমাকৃত ব্যক্তি মেয়াদী বোনাসের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা পলিসির নগদ মূল্যের সাথে জমা হয়। বিনিয়োগকৃত অর্থ পলিসির মেয়াদ শেষে অথবা বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর নিশ্চিত অর্থ (যে পরিমাণ অর্থের জীবন বীমা করা হয়) হিসেবে রিটার্ন আসবে। যা আপনি না থাকলেও আপনার পরিবারের জন্য এক অদৃশ্য অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবে এবং আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের নিরাপত্তা আপনি নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া, এই বয়সে বীমা করা মানে মৃত্যুর ঝুঁকিতে কম থাকা। ফলে আপনি নিজেই নির্দিষ্ট সময় শেষে আপনার কাঙ্ক্ষিত ম্যাচিউরিটি ভ্যালু (বীমা অঙ্ক + বোনাস) পেতে পারবেন।


৩। লোন গ্রহণের সুযোগ-

নিজেকে গড়তে ও নিজের প্রয়োজনের জন্য লোন গ্রহন, একজন ব্যক্তিকে এগিয়ে যেতে অনেক বেশী সহায়তা করে। চরম আর্থিক প্রয়োজনে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে লোন গ্রহণের সুবিধা প্রদান করে। লোনের পরিমাণ মূলত পলিসির নিয়ম বা আইনের উপর নির্ভর করে। নিজেকে সফল একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ৩০ বছরের মাঝে লোন গ্রহন একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। আর জীবন বীমায় এই লোন নেবার সুযোগ থাকে সবচেয়ে বেশী। নিজেকে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড় করাতে জীবন বীমা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।

৪। কর সুবিধা

জীবন বীমায় আপনি চমৎকার কর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বীমার আয় কিংবা পলিসি লোনের ক্ষেত্রে কোন কর প্রদান করতে হয় না। তাছাড়া বীমার পলিসি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কর আরোপের সম্ভাবনা থাকে না। ৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করলে, আপনি আপনার চাকরির পুরো সময়টা জুড়েই এই কর সুবিধা (বীমা পলিসির মেয়াদ পর্যন্ত) উপভোগ করে যেতে পারবেন। আর এই পলিসির বিপরীতে আপনি যদি কোন লোন নিয়ে থাকেন অথবা নিতে চান, সেই লোনেও কোন কর প্রদান করা লাগবে না।

৫। সমন্বয়যোগ্যতা বিবেচনা

অনেক সময় বীমাকৃত ব্যক্তি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে তাদের বীমা পলিসিগুলো হতে প্রাপ্য সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী বীমা অঙ্ক উপযুক্ত হচ্ছে না। সেক্ষত্রে কিন্তু সহজেই প্রয়োজন ও সুবিধার মধ্যে সমন্বয় করা যায়। বীমাগ্রাহক স্বাধীনভাবে বীমার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করতে পারেন, যারা পরবর্তীতে মৃত্যুকালীন সুবিধা ভোগ করবেন। ৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করলে আপনি নিজের মত করে উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে পারবেন আর তাকেও এই পলিসি সম্পর্কে ভাল একটি ধারনা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আপনার সুবিধামত সময়ের মধ্যে পলিসি সমন্বয় করে নিতে পারেন। এছাড়া এই বয়সে বেশ অল্প মূল্যেই আপনি বীমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন। কারন বয়স যত কম হবে বীমা প্রিমিয়ামের মাত্রাও সেই অনুপাতে বেশ কম হবে।

৬। জীবনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা-

বিপদ অথবা সমস্যা কখনো সময় বুঝে শুনে বা সংকেত দিয়ে আসে না। বীমাগ্রহীতার আকস্মিক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় তার পরিবারের উপর নেমে আসতে পারে চরম আর্থিক দুর্ভোগ, যা মোকাবেলায় জীবন বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে জীবন বীমা করার মাধ্যমে আপনার ও পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিত হয়। আপনার অবর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে জীবন বীমা আপনার পরিবারের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন নিশ্চিত করবে।

৭। বিভিন্ন পর্যায়ের পরিকল্পনা –

৩০ বছর বয়সের মাঝে একজন মানুষ তার জীবনকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন। তাই জীবন বীমার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আপনি জীবনের নানা লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা করতে পারেন। জীবনের একেকটি পর্যায়ে আপনি ও আপনার পরিবার বিভিন্ন প্রয়োজনের সম্মুখীন হতে পারেন। এছাড়া অনেক বড় বাঁধা বিপত্তি আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নাও দিতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে জীবন বীমা দরকারি প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করবে। আপনার সন্তানের শিক্ষার ব্যায় বহন করা, আপনার নিজের একটা স্বপ্নের পরিকল্পনা, বাড়ি বানানো, নিজের একটি ব্যাবসায় গড়ে তোলা কিংবা অবসরের পরবর্তী দিনগুলো সুন্দরভাবে কাটানো – সবকিছু কিন্তু জীবন বীমার মাধ্যমে সম্ভব! এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন ব্যবসা বাণিজ্যের পরিকল্পনার সহযোগি হিসেবে জীবন বীমা অনেক বেশী প্রয়োজনীয় একটি মাধ্যম।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা ও নানা ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এতে করে বীমার খরচও বেড়ে যায়। অর্থাৎ তরুণ বয়সে যত অল্প খরচে বীমা করা যাবে বয়সকালে তা সম্ভব হবে না। অল্প বয়সে বীমা করলে মাসিক/বাৎসরিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ কম থাকে যা বীমার পুরো মেয়াদকাল পর্যন্ত স্থির থাকে। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও আপনি সেই প্রথম বছরের সেট করা প্রিমিয়াম দিয়েই বীমাটি চালিয়ে যেতে পারবেন। তাই অল্প সময়ের জন্য বারবার বীমা করার চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী একটি বীমা করা ভালো।

যদি আপনার বয়স ৩০ বছরের মাঝে হয়ে থাকে কিন্তু এখনো বীমা করেননি, তাহলে আপনি বিভিন্ন বীমা কোম্পানির পলিসিগুলি বিশ্লেষণ করে একটি কাঙ্ক্ষিত জীবন বীমা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার পরিবারকে অসাধারণ সব সুবিধা প্রদান করবে এবং আপনার অবসরের সময়কালটা স্বাচ্ছন্দে কাটাতে সহায়তা করবে।

সূত্র: গার্ডিয়ান লাইফ

স্বল্প প্রিমিয়ামে ঝুঁকি মোকাবেলার নতুন বীমা পণ্য আনলো ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ


বীমা বার্তা: যারা সঞ্চয় করতে সক্ষম নয় কিংবা যারা সঞ্চয় করতে আগ্রহী নন অথচ ঝুঁকি মোকাবেলার সুবিধা বহন করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য স্বল্প প্রিমিয়ামের নতুন বীমা পণ্য বাজারজাত করার জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (IDRA)’র অনুমোদন পেয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এবং সূদমুক্ত ও শরীয়া ভিত্তিক জীবন বীমা কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ।সম্প্রতি কোম্পানির এ্যাকচ্যুয়ারীয়াল ডিপার্টমেন্টের জারি করা এক সার্কুলার থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

নতুন বীমা পরিকল্প নং ১৮ মেয়াদী বীমা পরিকল্প (মুনাফাবিহীন) বিপণন প্রসঙ্গে জারি করা সার্কুলার অনুযায়ী ২০ থেকে ২৮ বছর বয়সে নূন্যতম ৫ বছর মেয়াদে প্রতি হাজার টাকার বীমা অংকেংর জন্য প্রিমিয়াম দিতে হবে মাত্র ১ টাকা ৯১ পয়সা থেকে ১ টাকা ৯৮ পয়সা; ২৯ থেকে ৩৭ বছর বয়সে ২ টাকা ১ পয়সা থেকে ২ টাকা ৮২ পয়সা; ৩৮ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ৩ টাকা ৭ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৭২ পয়সা; ৪১ থেকে ৪৪ বছর বয়সে ৪ টাকা ১৩ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৮০ পয়সা; ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সে ৬ টাকা ৫১ থেকে ১০ টাকা ২২ পয়সা এবং ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ১১ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ৩১ টাকা ৩৫ পয়সা হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে।

১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এই বীমা করা যাবে এবং বীমাটির মেয়াদ ৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

বীমা অংক সর্বনিম্ন ১ লক্ষ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৩৫ লক্ষ টাকা।

স্বল্প প্রিমিয়ামের এই বীমার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে শুধু ঝুঁকি মোকাবেলার সুবিধা পাওয়া যাবে, মেয়াদ শেষে ঝুঁকি সুবিধাও শেষ হয়ে যাবে এবং কোন অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না।অর্থাৎ, এই বীমার জন্য আপনি যে প্রিমিয়াম দিবেন সেটা হলো বীমাবৃত হওয়ার সার্ভিস এবং এর মাধ্যমে আপনি কোন আর্থিক সুবিধা পাবেন না; কিন্তু বীমাবৃত অবস্থায় আপনি মারা গেলে আপনার পরিবার বা যাকে আপনি উইল করে যাবেন তিনি বা তারা এই সুবিধা পাবেন।

সত্যিকথা বলতে কি, যারা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে তারা ফারইস্টের এই নতুন বীমায় মোটেও উৎসাহী হবে না।কিন্তু যেসব দায়িত্ববান বাবা নিজের স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন তারা এই বীমার সুবিধা নিতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করা যায়।#

Wednesday, October 16, 2019

বীমা খাতে আস্থার সংকট: দায়ী কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরী

মুহাম্মদ আবুল হুসাইন:


পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জীবন বীমাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়।বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে বীমা শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটলেও আমাদের দেশে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।আমাদের দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পারিপার্শ্বিকতার বিচারে বীমা শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও আশানুরূপ উন্নতি লাভ করতে পারেনি।এর মূল কারণ বীমা শিল্প-সম্পর্কে বদ্ধমূল নেতিবাচক ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা এবং আস্থার সংকট।

বীমা হলো গ্রাহক ও বীমা কোম্পানির মধ্যকার ‘‘বীমা চুক্তি’’ যা 'বীমাকারীর কাছ থেকে বীমাদাতাকে আর্থিক ঝুঁকি হস্তান্তরের নীতিতে কাজ করে। বীমাকৃত হিসেবে, আপনি অপ্রত্যাশিত ঘটনার ক্ষেত্রে, বীমাকারীর (কোম্পানির) কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য প্রিমিয়াম প্রদান করেন। সুতরাং, বীমা থাকা আপনার কাঁধের উপর আর্থিক বোঝা হ্রাস করে।

আরো সহজভাবে বললে বলা যায়, বীমা হল অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ন্যায়সঙ্গত ও নির্দিষ্ট ঝুঁকির স্থানান্তর। এর মাধ্যমে বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের (প্রিমিয়ামের) বিনিময়ে গ্রাহকের আংশিক বা সমস্ত সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। এটি অনিশ্চিত ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।

বীমা কোম্পানিগুলোকে প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সব ধরনের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত থাকে এবং অসংখ্য বীমাকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে বীমা কোম্পানিগুলো মূলধন বৃদ্ধি করে।বীমা প্রক্রিয়া, ক্ষয়ক্ষতির ধরন এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি মেনে চলতে হয়।

ভারতসহ পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে সার্বিক আর্থিক খাত বিশেষ করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিসর বাড়াতে বীমা খাত তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।উন্নত বিশ্বে তো বীমা খাত বিরাট ভূমিকা পালন করছে।তবে তাদের তুলনায় আমাদের বীমা খাত এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।বৈশ্বিক না হোক, আঞ্চলিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হলেও বাংলাদেশের বীমা শিল্পে আমাদের অনেক সংস্কার করতে হবে।

কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু বীমা কোম্পানির অনিয়ম, দুর্নীতি আর পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও গ্রাহকের বীমা দাবির টাকা পরিশোধ না করায় দেশের বীমা শিল্পে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো বীমা শিল্পকে।কারণ আস্থা সংকটের কারণে গ্রাহকরা বীমা করতে চাচ্ছে না।ফলে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।

সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)'র জারি করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বীমা শিল্পের বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কয়েকটি বীমা প্রতিষ্ঠানের দাবি পরিশোধের হার অত্যন্ত কম হওয়ায় এ খাতে আস্থার সংকট রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বীমা গ্রহীতা অধিক সংখ্যায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করছেন এবং মৌখিকভাবে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের অবহিত করছেন। এ অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তিতে বীমাকারী দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিচ্ছে এবং জবাবদিহির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না, এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা বেশি নয়।তবে কয়েকটি কোম্পানি এ খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।এ খাতের আস্থা অর্জনের জন্য সবার আগে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।

আইডিআরএর সদস্য গোকুল চাঁদ দাস বলেন, মোট জীবন বীমার প্রায় ৮০ ভাগ দাবি সময়মতো নিষ্পত্তি হয়।কিন্তু কিছু কোম্পানি রয়েছে তাদের পলিসির বড় অংশ অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে।যে কারণে পুরো খাতে এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। আইডিআরএ চাচ্ছে এসব কোম্পানির দাবিগুলো দ্রুত নিষ্পন্ন করতে।

কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিষ্পন্ন দাবি প্রাথমিকভাবে নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য অতিরিক্ত, যুগ্মসচিব ও উপসচিব পর্যায়ের কয়েকজন নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্বও দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, আইডিআরএ’র কাছে কয়েক হাজার অভিযোগ জমা পেড়েছে। জমানো টাকা ফিরে পেতে প্রতিদিনই গ্রাহকরা আইডিআরএ অফিসে ভিড় করছেন। পলিসির মেয়াদ শেষ হলেও বছরের পর বছর বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করছে না।

সর্বশেষ হিসাবে বীমা কোম্পানিগুলোর কাছে অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ৫৭২ কোটি টাকা। জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক দক্ষতা নিয়ে আইডিআরএর সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এসব পলিসির বিপরীতে সুদসহ হিসাব করলে তা কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। 

আইডিআরএর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মেটলাইফের অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা।প্রগেসিভ লাইফের ৪০ কোটি ৯৪ লাখ ও পদ্মা ইসলামী লাইফের ২৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।  সানলাইফের ১৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। এছাড়া গোল্ডেন লাইফের ৬৭ কোটি, বায়রা লাইফের ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার, ন্যাশনাল লাইফের ৯৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা কোম্পানি জীবন বীমা কর্পোরেশনের অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণ ১৮৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। মেঘনা লাইফের ১৭ কোটি ৯৩ লাখ, সন্ধানী লাইফের ১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।

বিদেশি মালিকানার বীমা কোম্পানি মেটলাইফের অধীনেই দেশের জীবন বীমার ২৩ শতাংশ হয়েছে।প্রগেসিভ লাইফ ও পদ্মা ইসলামী লাইফ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, সর্বশেষ বছরে এই দুই কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ডও দেয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানির মালিকরা অনেক প্রভাবশালী। ফলে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া যাচ্ছে না।কিন্তু অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে সামগ্রীকভাবে বীমা খাতে যে অনাস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তার নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে ভাল কোম্পানিগুলোও।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, বীমার নাম শুনলেই সাধারণ মানুষ বিরূপ মন্তব্য করে থাকে।এই নেতিবাচক পরিস্থিতির কারণে এই খাতে যোগ্য বীমাকর্মীরও সংকট দেখা দিয়েছে।কারণ, সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা সংকট বিদ্যমান থাকায় বীমা কর্মীর বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।ফলে সহজে কেউ বীমা কর্মী হতে চান না।

এ প্রসঙ্গে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) বিনীত আগরওয়াল বলেন, জীবন বীমার গ্রাহকরা সঠিকভাবে দাবির টাকা না পাওয়ায় এই খাতে একধরনের ইমেজ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় এজেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন এজেন্ট না আসায় নতুন ব্যবসাও আসছে না। ইমেজ সঙ্কট কাটানো গেলে অবশ্যই বীমা খাতের আওতা বাড়বে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বীমা কোম্পানিগুলো বছরে যে প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তার ৭৩.৫ শতাংশই জীবন বীমা কোম্পানির। বাকি ২৬.৫ শতাংশ সাধারণ বীমা কোম্পানির। সুতরাং বীমা ব্যবসার সিংহভাগই জীবন বীমা কোম্পানির দখলে।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান সব থেকে কম বাংলাদেশে। অথচ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সব থেকে বেশি বেড়েছে। ২০০৯ সালে দেশের জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান ছিল ১ শতাংশের বেশি। বর্তমানে তা কমে ০.৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে আগরওয়াল বলেন, আমরা প্রতি বছর ৫০০ কোটি টাকার ওপরে দাবি পরিশোধের পরও নিয়মিত আমাদের লাইফ ফান্ড বাড়ছে। কারণ, ডেল্টা লাইফ আইডিআরএ সব নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করে।

আইডিআরএর সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। তাতে দেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর অনিষ্পন্ন দাবিতে ৫৭২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আটকে আছে। ২ লাখ ৭১ হাজার ২৪০টি পলিসির দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু দাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ দাবি, সারেন্ডার বা মেয়াদ পুর্তির আগে বীমা ভেঙে ফেলা, সার্ভাইবেল বেনিফিট এবং গোষ্ঠী ও স্বাস্থ্য বীমার দাবি রয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৩টি পলিসি তামাদি অবস্থায় রয়েছে। এসব পলিসির গ্রাহকদের মধ্যে যাদের নিয়ম অনুযায়ী অর্থ ফেরত পাওয়ার কথা, তাদের অনেকেই অর্থ পাচ্ছেন না।

বীমা শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী মনে করেন, 'বীমা খাতের প্রধান সমস্যা ভাবমূর্তি সংকট। অনেকেই এখনও এ খাতকে আস্থায় নিতে পারেনি।'

জীবন বীমা করপোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সোহরাব উদ্দিন একচুয়ারি বলেন, 'অনেকে মনে করেন বীমা কোম্পানিতে টাকা রাখলে আর ফেরত পাওয়া যাবে না। এই অনাস্থা দূর করতে হবে।' 

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, যে দেশের বীমা খাত যত শক্তিশালী, সে দেশের অর্থনীতি তত শক্তিশালী। সমস্যা দূর করে এ খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আস্থা সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এরফলে সামগ্রিকভাবে বীমা শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি উপলব্ধি করে বীমা কোম্পানি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।সরকারকে কঠোর হতে হবে। বিশেষ করে কোনোভাবেই অপরাধীদের ছাড় দেয়া যাবে না।

সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করছে, বীমা খাত বাদ দিয়ে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এজন্য সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে অনেক অগ্রসর হবে। এতে জিডিপিতে বীমা খাতের অবদান বাড়বে।

এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে আইডিআরএ এক কর্মকর্তা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা অভিযুক্ত প্রতিটি কোম্পানির সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে কঠোর বার্তা দিয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা না দিলে বাধ্য হয়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমরাও আশা করি কর্তৃপক্ষ বীমা খাতে বিদ্যমান আস্থার সংকট কাটাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, যাতে গুটিকয়েক কোম্পানির কারণে গোটা বীমা শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত না হয়।