বীমা বার্তা ডেস্ক: জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যেখানে এককালীন অর্থ বা নির্দিষ্ট সময়ান্তে কিস্তি পরিশোধের বিপরীতে বীমাগ্রহীতার মৃত্যুতে অথবা নির্ধারিত বছরসমূহ শেষে বীমা কোম্পানি বৃত্তি অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জীবন বীমা সাধারনত নিজের আর্থিক সুবিধার জন্য নয়। বরং বীমা গ্রহীতার অবর্তমানে তার ওপর নির্ভরশীলদের জন্য আর্থিক সমর্থন যোগানোই জীবন বীমার মূল লক্ষ্য। তাই মানুষের আর্থিক জীবনযাত্রায় জীবন বীমা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক সংযোজন। জীবন বীমার অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে যা আপনার এবং আপনার পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম। আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎ আপনার নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারনে জীবন বীমা এক পথ প্রদর্শকের ভুমিকা পালন করে। একজন ব্যক্তি ৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করার মধ্যে নিজের ভবিষ্যৎকে অনেক জায়গায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিতেই এই লেখাটি-
১। দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় –
একজন যুবকের ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে গুছিয়ে তোলার যে পরিকল্পনা দরকার তা হতে হয় দীর্ঘ মেয়াদী। ৩০ বছর বয়সের মাঝে করা জীবন বীমা আপনাকে অর্থ সংরক্ষণ ও ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় গড়ে তুলতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঞ্চয় উপাদানের জন্য এই বয়সটি একটি আদর্শ সময়, যা আপনার অবসর পরবর্তী জীবনের আর্থিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। এমনকি তা আপনার সন্তানের ভবিষ্যত লক্ষ্য পূরণের কাজেও আসবে। এভাবে ভবিষ্যত গড়তে জীবন বীমায় সুরক্ষা ও সঞ্চয় উভয় সুবিধাই ভোগ করা যায়। তাই ৩০ বছর বয়সের মাঝে গড়ে তোলা পরিকল্পনার প্রথম নির্দেশনের মাঝে অন্যতম হলো জীবন বীমা করা।
২। বিনিয়োগে রিটার্ন –
৩০ বছর বয়সের মধ্যে জীবন বীমা হতে পারে একটি অসাধারণ সিদ্ধান্ত কারন জীবন বীমা আপনাকে যুবক বয়স থেকেই দীর্ঘমেয়াদী নিশ্চিত নিরাপত্তা প্রদান করে। জীবন বীমায় বীমাকৃত ব্যক্তি মেয়াদী বোনাসের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা পলিসির নগদ মূল্যের সাথে জমা হয়। বিনিয়োগকৃত অর্থ পলিসির মেয়াদ শেষে অথবা বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যুর পর নিশ্চিত অর্থ (যে পরিমাণ অর্থের জীবন বীমা করা হয়) হিসেবে রিটার্ন আসবে। যা আপনি না থাকলেও আপনার পরিবারের জন্য এক অদৃশ্য অভিভাবকের ভূমিকা পালন করবে এবং আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের নিরাপত্তা আপনি নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া, এই বয়সে বীমা করা মানে মৃত্যুর ঝুঁকিতে কম থাকা। ফলে আপনি নিজেই নির্দিষ্ট সময় শেষে আপনার কাঙ্ক্ষিত ম্যাচিউরিটি ভ্যালু (বীমা অঙ্ক + বোনাস) পেতে পারবেন।
৩। লোন গ্রহণের সুযোগ-
নিজেকে গড়তে ও নিজের প্রয়োজনের জন্য লোন গ্রহন, একজন ব্যক্তিকে এগিয়ে যেতে অনেক বেশী সহায়তা করে। চরম আর্থিক প্রয়োজনে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে লোন গ্রহণের সুবিধা প্রদান করে। লোনের পরিমাণ মূলত পলিসির নিয়ম বা আইনের উপর নির্ভর করে। নিজেকে সফল একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ৩০ বছরের মাঝে লোন গ্রহন একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। আর জীবন বীমায় এই লোন নেবার সুযোগ থাকে সবচেয়ে বেশী। নিজেকে ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তা হিসেবে দাঁড় করাতে জীবন বীমা বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।
৪। কর সুবিধা
জীবন বীমায় আপনি চমৎকার কর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বীমার আয় কিংবা পলিসি লোনের ক্ষেত্রে কোন কর প্রদান করতে হয় না। তাছাড়া বীমার পলিসি পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কর আরোপের সম্ভাবনা থাকে না। ৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করলে, আপনি আপনার চাকরির পুরো সময়টা জুড়েই এই কর সুবিধা (বীমা পলিসির মেয়াদ পর্যন্ত) উপভোগ করে যেতে পারবেন। আর এই পলিসির বিপরীতে আপনি যদি কোন লোন নিয়ে থাকেন অথবা নিতে চান, সেই লোনেও কোন কর প্রদান করা লাগবে না।
৫। সমন্বয়যোগ্যতা বিবেচনা
অনেক সময় বীমাকৃত ব্যক্তি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে তাদের বীমা পলিসিগুলো হতে প্রাপ্য সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী বীমা অঙ্ক উপযুক্ত হচ্ছে না। সেক্ষত্রে কিন্তু সহজেই প্রয়োজন ও সুবিধার মধ্যে সমন্বয় করা যায়। বীমাগ্রাহক স্বাধীনভাবে বীমার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করতে পারেন, যারা পরবর্তীতে মৃত্যুকালীন সুবিধা ভোগ করবেন। ৩০ বছর বয়সের মাঝে জীবন বীমা করলে আপনি নিজের মত করে উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে পারবেন আর তাকেও এই পলিসি সম্পর্কে ভাল একটি ধারনা দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আপনার সুবিধামত সময়ের মধ্যে পলিসি সমন্বয় করে নিতে পারেন। এছাড়া এই বয়সে বেশ অল্প মূল্যেই আপনি বীমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন। কারন বয়স যত কম হবে বীমা প্রিমিয়ামের মাত্রাও সেই অনুপাতে বেশ কম হবে।
৬। জীবনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা-
বিপদ অথবা সমস্যা কখনো সময় বুঝে শুনে বা সংকেত দিয়ে আসে না। বীমাগ্রহীতার আকস্মিক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় তার পরিবারের উপর নেমে আসতে পারে চরম আর্থিক দুর্ভোগ, যা মোকাবেলায় জীবন বীমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে জীবন বীমা করার মাধ্যমে আপনার ও পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা অধিকতর নিশ্চিত হয়। আপনার অবর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটে জীবন বীমা আপনার পরিবারের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন নিশ্চিত করবে।
৭। বিভিন্ন পর্যায়ের পরিকল্পনা –
৩০ বছর বয়সের মাঝে একজন মানুষ তার জীবনকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন। তাই জীবন বীমার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আপনি জীবনের নানা লক্ষ্য পূরণের পরিকল্পনা করতে পারেন। জীবনের একেকটি পর্যায়ে আপনি ও আপনার পরিবার বিভিন্ন প্রয়োজনের সম্মুখীন হতে পারেন। এছাড়া অনেক বড় বাঁধা বিপত্তি আপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নাও দিতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে আপনাকে জীবন বীমা দরকারি প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করবে। আপনার সন্তানের শিক্ষার ব্যায় বহন করা, আপনার নিজের একটা স্বপ্নের পরিকল্পনা, বাড়ি বানানো, নিজের একটি ব্যাবসায় গড়ে তোলা কিংবা অবসরের পরবর্তী দিনগুলো সুন্দরভাবে কাটানো – সবকিছু কিন্তু জীবন বীমার মাধ্যমে সম্ভব! এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন ব্যবসা বাণিজ্যের পরিকল্পনার সহযোগি হিসেবে জীবন বীমা অনেক বেশী প্রয়োজনীয় একটি মাধ্যম।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতা ও নানা ঝুঁকির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। এতে করে বীমার খরচও বেড়ে যায়। অর্থাৎ তরুণ বয়সে যত অল্প খরচে বীমা করা যাবে বয়সকালে তা সম্ভব হবে না। অল্প বয়সে বীমা করলে মাসিক/বাৎসরিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ কম থাকে যা বীমার পুরো মেয়াদকাল পর্যন্ত স্থির থাকে। ফলে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েও আপনি সেই প্রথম বছরের সেট করা প্রিমিয়াম দিয়েই বীমাটি চালিয়ে যেতে পারবেন। তাই অল্প সময়ের জন্য বারবার বীমা করার চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী একটি বীমা করা ভালো।
যদি আপনার বয়স ৩০ বছরের মাঝে হয়ে থাকে কিন্তু এখনো বীমা করেননি, তাহলে আপনি বিভিন্ন বীমা কোম্পানির পলিসিগুলি বিশ্লেষণ করে একটি কাঙ্ক্ষিত জীবন বীমা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার পরিবারকে অসাধারণ সব সুবিধা প্রদান করবে এবং আপনার অবসরের সময়কালটা স্বাচ্ছন্দে কাটাতে সহায়তা করবে।
সূত্র: গার্ডিয়ান লাইফ