Wednesday, November 6, 2019

লাইফ ইন্স্যুরেন্স করার গুরুত্ব


বীমা বার্তা ডেস্ক: আপনি হয়তো ভাল চাকরি বা ব্যবসা করছেন।দিনরাত পরিশ্রম করছেন।কারণ আপনি চান আপনার পরিবার যেন স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে। তাদের কোন প্রয়োজন যেন অপূর্ণ না থাকে।আপনি আপনার সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তা করেন।প্রত্যেক বাবাই তা করে থাকেন।আপনার বাবা করেছিলেন, আপনার দাদা করেছিলেন।প্রতেক বাবাই সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন।‘‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’’ বলেছিলেন কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।সেই মধ্যযুগে।সন্তানের প্রতি বাবা-মার এই আশীর্বাদ চিরন্তন।

কিন্তু আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার জীবনে কোন বিপদ-মুসিবত-দুর্ঘটনা আসবে না? আপনার এই স্বচ্ছলতা সব সময়ই নির্বিঘ্ন থাকবে, তাই আপনার কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই, সঞ্চয়ের প্রয়োজন নেই কিংবা ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই?

আপনি যদি একজন দায়িত্বশীল পিতা, স্বামী বা অভিভাবক হন, তাহলে আপনার অবশ্যই সঞ্চয়ের পাশাপাশি ঝুঁকি মোকাবেলার পরিকল্পনা করা উচিত।কারণ বিপদ কখনো বলে আসেনা।এমনকি আপনার বৃদ্ধ বাবা, মা এমনকি নিকটাত্মীয়দের কথা চিন্তা করেও আপনার ঝুঁকি এড়ানো উচিত।এক্ষেত্রে আপনাকে সাপোর্ট দিবে জীবনবীমা।জীবন বীমা একদিকে একটি দীর্ঘ মেয়াদ সঞ্চয়, অন্যদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার গ্যারান্টি।

আপনি যদি কর্মজীবনে প্রবেশ করেই একটি দীর্ঘ মেয়াদী বীমা করেন, তাহলে মেয়াদ পূর্তির পর তা আপনার হাতে একটি বড় ধরনের মূলধন তুলে দিবে।কিন্তু আল্লাহ না করুন আপনি যদি কোন দুর্ঘনায় পড়ে পঙ্গু বা অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন আর কেউ এগিয়ে না আসলেওআপনার বিপদের বন্ধু হয়ে বীমা কোম্পানি ঠিকই এগিয়ে আসবে।আপনি যদি আপনার সামর্থ অনুযায়ী ১০, ২০ বা ৫০ লাখ বা এক কোটি টাকার একটি জীবনবীমার পলিসি করে করে মাত্র একটি প্রিমিয়াম দিয়েও দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে স্থায়ীভাবে হয়ে যান, তখন আপনাকে আর কোন প্রিমিয়াম দিতে হবে না এবং জীবন বীমা কোম্পানি সরকার নির্ধারিত বীমা আইন অনুসারে আপনাকে পূর্ণ

মেয়াদের বীমা অংক প্রদান করতে বাধ্য থাকবে।আর যদি দুর্ঘটনায় আপনার মৃত্যু হয়, তাহলে বীমা অংকের দ্বিগুণ অর্থ - ১০ লক্ষ টাকার পলিসি করলে ২০ লক্ষ টাকা বা ৫০ লক্ষ টাকার বীমা করলে ১ কোটি টাকা আপনার পরিবারকে প্রদান করা হবে।

আর আল্লাহ না করুন, মেয়াদ পূর্তির আগে, এমনকি একটি কিস্তি দিয়েও যদি স্বাভাবিকভাবেও মারা যান, তাহলেও আপনি বেঁচে থেকে মেয়াদ পূর্ণ করলে যেভাবে বোনাসসহ পূর্ণ মেয়াদের বীমা অংকের টাকা ফেরত পেতেন; জীবনবীমা কোম্পানি আপনাকে সে পরিমাণ অর্থ আপনার পরিবারের মনোনীতককে প্রদান করবে।

আপনি প্রতিদিন যে হোন্ডায় বা গাড়িতে চড়ে অফিসে বা ব্যবসায় কেন্দ্রে যান সেই হোন্ডা বা গাড়িটির বীমা করতে আপনি ভুলেননি।কিন্তু আপনি আপনার নিজের জীবন বীমা কি করেছেন?

আপনি একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার অবর্তমানে, আপনি যদি পৃথিবীতে না থাকেন, তাহলে আপনার পরিবার, আপনার সন্তানের জীবন কি একই ভাবে চলবে? তাদের আর্থিক অবস্থা কি একই রকম থাকবে? আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন। আপনার অবর্তমানে আপনার পরিবারের জন্য আপনি কোন ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেছেন? আপনি সুস্থ্য থাকলে কর্মঠ থাকলে হয়তো তাদের জীবন সুন্দরভাবে চলবে কিন্তু আপনি যদি না থাকেন তাদের জীবন কিভাবে চলবে?

অনেকে শুধু নিজের জীবনকালীন সময়টাকে নিয়েই ভাবে।আপনার মৃত্যু যে আপনার পরিবারের- আপনার শিশু সন্তান, আপনার স্ত্রী, আপনার বৃদ্ধ বাবা-মার জীবনেও যে অন্ধকার নেমে আসতে পারে তা কি আপনি ভেবেছেন?

এ কারণেই বলা হয়, বীমা করাটা আসলে একটি মহৎ কাজ; কারণ এটি সাধারণ নিজের জন্য করা হয় না, এটি করা হয় নিজের পরিবারের জন্য, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবার পরিজনদের জন্য।যারা নিতান্তই আত্মকেন্দ্রিক ও অদূরদর্শি তাদের পক্ষে বীমা করা কঠিন।কিন্তু যারা দয়ালু, দূরদর্শী ও মহৎ হৃদয়ের অধিকারী, যারা তাদের পরিবার-পরিজনকে ভালোবাসেন তারা অবশ্যই পরিবারের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে জীবনবীমা করবেন।

মহানবী (সা.) মানব জীবনের ৫টি অবস্থাকে ৫টি বিপরীত অবস্থার পূর্বে কাজে লাগানোর উপদেশ দিয়েছেন।এগুলো হলো: বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে; অসুস্থতা আসার আগে সুস্থতাকে; দারিদ্রতা আসার আগে স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্ততা আসার আগে অবসর সময়কে এবং মৃত্যু আসার আগে জীবনকে।

আল্লাহর রাসূলের উপরোক্ত উপদেশ পালনের মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ কল্যাণ নিহিত।যেমন:

১. বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে কাজে লাগানো:

প্রথমত: স্বাস্থ্যগত দিক- যৌবনের যত্ন নিতে হবে, তাহলে বার্ধক্য সময়ে সুস্থ থাকা যাবে।

দ্বিতীয়ত: অর্থনৈতিক দিক: এ সময়ে মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ পায়, যার কারণে চাকরি-বাকরি থেকে অবসর নিতে হয় এবং আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়।তাই বৃদ্ধ বয়সে যাতে সন্তানদের উপর নির্ভর করতে না হয় তার ব্যবস্থা যৌবনকালেই করা উচিত।অর্থাৎ কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর থেকেই বৃদ্ধকালের জন্য কিছু কিছু সঞ্চয় করতে থাকুন যাতে বৃদ্ধ কালে কারো কাছে হাত পাততে না হয়।আর এর জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো পেনশন বীমা।

বিশ বছর বয়স থেকেই এটি চালু করা যায়, আর ৫০ বছর বয়স থেকেই মাসে মাসে পেনশন ভোগ করা যায়।

২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে কাজে লাগানো:

খাদ্য নিরাপত্তার অভাব, পরিবেশ দুষণ ইত্যাদি কারণে বয়স বাড়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।আমাদের দেশে প্রতি বছর ২ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে দেড় লাখ-ই মারা যায়। কিডনি রোগও বাড়ছে। এছাড়া মানুষের জীবনে জটিলতা, অস্থিরতা বাড়ার কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ছে।আর একটি পরিবারের কোন সদস্য যখন এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তখন ঐ পরিবারটিও কিন্তু আর্থিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়ে যায়। তাই সুস্থ্ থাকা অবস্থাতেই এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিন। একটি জীবনবীমা এক্ষেত্রে একটি ভাল অবলম্বন হতে পারে।

৩. দারিদ্রতা আসার আগে স্বচ্ছলতাকে কাজে লাগানো: সুসময়ের সঞ্চয় দুঃসময়ের অবলম্বন।

৪. ব্যস্ততা আসার আগে অবসর সময়কে: 

তারুণ্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে সোনালী সময়। জ্ঞান আহরণ, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের জন্য এটিই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।অথচ এই সময়টাকেই সবচেয়ে বেশি অপচয় করা হয়।জীবনের সঠিক পরিকল্পনা না থাকা এবং সময় ব্যবস্থাপনার অভাবেই এটি হয়ে থাকে।

৫.মৃত্যু আসার আগে জীবনকে: 

জীবন কোন তামাশার বিষয় নয়।সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জীবনকে কর্মমূখর ও দামি করে তুলতে হবে।শুধু দুনিয়া নয়, আখেরাতের কামিয়াবির জন্যও আপনাকে কাজ করতে হবে দুনিয়াতেই।আর এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা।আপনি হয়তো দুনিয়ায় অনেক ধন-সম্পদ রেখে যেতে পারেন; যা হয়তো আপনার সন্তানরা বংশ পরম্পরায় ভোগ করেও শেষ করতে পারবে না।আপনার রেখে যাওয়া সম্পদ আপনার সন্তানরা ভাল কাজেও লাগাতে পারে যা আপনার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করবে।আবার সন্তানরা যদি যথার্থ মানুষ না হয় তাহলে কিন্তু উল্টোটাও করতে পারে।তাই জীবিত থাকতেই আপনার এমন কিছু জনহিতকর কাজ করে যাওয়া উচিত যা আপনার মৃত্যুর পর সদকায়ে জারিয়া হিসেবে জারি থাকবে।

কিন্তু জীবিত অবস্থায় আপনার যদি বড় কোন জনহিতকর কাজ করার সামর্থ না থাকে তাহলে আপনি ইচ্ছে করলে কোন সমাজসেবামূলক বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান করার জন্য একটি স্বল্প প্রিমিয়ামের মুনাফা বিহীন দীর্ঘ মেয়াদী বীমা করতে পারেন, যা শুধু আপনার মৃত্যু ঝুঁকি কাভার করবে।এক্ষেত্রে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তালিকা-১৮ মেয়াদী বীমা করতে পারেন, যা আপনার মৃত্যুর পর প্রদেয় বীমা অংক দ্বারা আপনার সন্তানগণ বা মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জনহিতকর কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।

মৃত্যুর পর ঋণ পরিশোধে জীবনবীমার ভূমিকা

আপনি হয়তো কোন কারণে (ব্যবসায় লোকসান, বাড়ী করা, ব্যাংকে বন্ধক, চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি) বড় ধরনের ঋণ রেখে মারা গেলেন, যা আপনার পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে উঠতে পারে।দেখা গেলো, আপনার পরিবার আপনাকে আর ঋণমুক্ত করতে সক্ষমই হলো না; ফলে আপনি মৃত্যুর পরও ঋণগ্রস্থই থেকে গেলেন; যা আখেরাতে আপনার জন্য ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।কারণ, আল্লাহ হয়তো আপনার সব গুনাহ মাফ করবেন, কিন্তু ঋণ মাফ করবেন না।কারণ ঋণ বান্দার হক।যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা (অর্থাৎ যার হক আপনি নষ্ট করেছেন) আপনাকে মাফ না করবে ততক্ষণ আল্লাহও আপনাকে মাফ করবেন না।আর, বলাই বাহুল্য কিয়ামতের কঠিন সময়ে কেউ তার হক ছাড়বে না, সবাই তখন নিজের মুক্তি কামনা করবে।তখন পাওনাদারকে আপনার পূণ্য দিয়ে ঋণ শোধ করতে হবে।আর আপনার যদি পূণ্য না থাকে, তখন পাওনাদারের গোনাহ’র বোঝা আপনাকে বহন করতে হবে, যা হবে এক ভয়াবহ ব্যাপার।

তাই, আপনার মৃত্যুর পর আপনার পরিবার যাতে সহজেই আপনার ঋণ পরিশোধ করতে পারে তার একটা ব্যবস্থা আপনার করা উচিত।এক্ষেত্রে একটি জীবন বীমা পলিসি আপনাকে ঋণমুক্ত করতে সহায়তা করতে রাখতে পারে বিরাট ভূমিকা।সুতরাং, আপনার বয়স যদি ৪০’র কোঠায় পৌঁছে যেয়ে থাকে, তাহলে আর দেরি না করে আজই একটি বীমা করে ফেলুন।

জীবন বীমা সঞ্চয় ও ঝুঁকি মোকাবেলার সুবিধা ছাড়াও ঋণ সুবিধাও প্রদান করে থাকে। যখন অন্য কোন প্রতিষ্ঠান আপনাকে লোন দিবে না, তখন জীবন বীমাতে আপনার জমাকৃত টাকার উপর ঋণ সুবিধা এবং আপদকালীন সময়ে আর্থিক সুবিধা পাবেন।

সন্তানের শিক্ষা ও বিবাহ:

‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ 
আজকের শিশুই আগামী দিনের নাগরিক।

শিশুর ভবিষ্যতের জন্য প্রত্যেক বাবা-মা’রই একটি পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে অনেক কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।

চিন্তা করুন তো, আজ যদি আপনার শিশুর বয়স এক বছর হয়, তাহলে ২০ বছর পর সে হবে একজন টগবগে তরুণ বা বা তরুণী।তখন তার চোখে-মুখে থাকবে কত স্বপ্ন, তাই না? সেটা হতে পারে উচ্চ-শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কিংবা বিদেশ যাত্রা, কিংবা কোন ব্যবসায়-উদ্যোগ কিংবা বিবাহ-সাদীর ব্যাপার।আর এসব কিছুর সাথেই কিন্তু এককালীন অনেকগুলো টাকা-পয়সার বিষয় জড়িত, যা ঐ সময় হয়তো আপনার পক্ষে যোগান দেয়া সম্ভব হবে না।

আবার এমনও তো হতে পারে, আপনার জীবনে ঘটে গেলো বড় কোন দুর্ঘটনা, কিংবা নিভে গেলো আপনার জীবন-প্রদীপ।তখন আপনার সন্তান, আপনার স্ত্রী-পরিজন-পরিবার- তাদের জীবনে নেমে আসবে ঘোর অমানিসা।আপনার সন্তান কি তখন তার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে? আপনার অবর্তমানে আপনার স্ত্রী সংসারকে কতটুকু সামাল দিতে পারবে? এমনও তো হতে পারে আপনি তাদের জন্য অবলম্বন হিসেবে কোন কিছুই করে যেতে পারলেন না?

এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যই আমাদের রয়েছে আপনার শিশুর জন্য শিক্ষা ও বিবাহ বীমা।#

No comments:

Post a Comment