Tuesday, November 19, 2019

বীমা করার আগে সঠিক বীমা কোম্পানি ও বীমা পরামর্শক নির্বাচন জরুরী


মুহাম্মদ আবুল হুসাইন: বীমা করার আগে সঠিক বীমা সেবা ও কোম্পানি নির্বাচন করা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।সঠিক কোম্পানি নির্বাচন কয়েকটি বিষয়ের উপর একান্তভাবে নির্ভর করে।যেমন:

১। কোম্পানীর সুনাম: কোন বীমা কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ত হবার আগে তার উপর সঠিক অনুসন্ধান প্রয়োজন।আর এর জন্য সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছ থেকে খোঁজ-খবর নেয়া।কারণ, কোন বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কোন অভিযোগ থাকলে তারা সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছেই তাদের অভিযোগ পেশ করে থাকে।তাই এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিই বলতে পারবে কোন কোম্পানি কতটুকু ভাল বা খারাপ।তাছাড়া আইডিআরএ যেহেতু বীমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে, সে কারণে এই সংস্থার ওয়েব সাইটে গেলে আপনি বিভিন্ন কোম্পানি সম্পর্কে তাদের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ ও মতামতও জানতে পারবেন।যেমন অনেক বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে যে, তারা গ্রাহকদের বীমা দাবী পরিশোধ করতে গড়িমসি করে থাকে।এসব অভিযোগের মাত্রা অনুসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি সম্প্রতি অভিযুক্ত বীমা কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে এবং তাদেরকে গ্রাহকদের দাবি পূরণে বাধ্য করার জন্য কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে।আপনি সেই তালিকা থেকে সহজেই সতর্ক হতে পারেন।পাশাপাশি ভাল কোম্পানিগুলোর তালিকা বা শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে কোন কোন কোম্পানি সেটিও আপনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে জানতে পারবেন।পাশাপাশি বীমা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থাও শীর্ষ কোম্পানিগুলোর অবস্থান মূল্যায়ন করে থাকে।আপনি গুগলে সার্চ করলেও বাংলাদেশের শীর্ষ বীমা কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা পেয়ে যাবেন।

২। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা: যদি বীমা সংস্থার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকে, তবে আপনার বীমা দাবিটির বিপরীতে তারা অর্থ প্রদান করতে পারবে না। অতএব, সঠিকভাবে অর্থ সরবরাহ করতে পারে এমন কোম্পানিগুলি নির্বাচন করতে হবে।এক্ষেত্র কোন কোম্পানির লাইভ ফান্ড (রিজার্ভ ফান্ড), সম্পদের পরিমাণ ইত্যাদিও বিবেচনায় নিতে পারেন। ভাল আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন কোম্পানি বেছে নেয়ার সময়ে তাদের আর্থিক স্টেটমেন্ট এবং তাদের আর্থিক প্রবিদ্ধির হার নির্ণয় করা উচিত।কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ওয়েব সাইট ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ ব্যাপারে রিসার্চ করা খুবই সহজ। বিভিন্ন অনলাইন রিভিউ, রেটিং এ ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৩। বৈধ স্বীকৃতি: বীমা কোম্পানি নির্বাচন করার সময় তার কোন বৈধ স্বীকৃতি এবং পূঁজিবাজারে সেটি তালিকাভুক্ত কি না, শেয়ার হোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ দিচ্ছে কিনা
ইত্যাদি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এসব থেকেই আপনি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন কোম্পানিগুলো কতটা শক্তিশালী, স্বচ্ছ, নির্ভরযোগ্য এবং দায়বদ্ধ।

৪। গ্রাহক সেবা: একটি জীবন বীমার গ্রাহক সেবা হবে স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য। কোম্পানী তাদের গ্রাহক পরিসেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের যে কোন তথ্য কিংবা সমস্যার দ্রুত সমাধান করে দিতে পারে। তাই, বীমা কোম্পানি বাছাইয়ে ভাল গ্রাহক সেবা দেয়া বীমা কোম্পানিকে প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়।

৫। সহজ যোগাযোগ: বীমা কোম্পানিগুলি আপনার সাথে কীভাবে যোগাযোগ করে তা তাদের সেবা নেবার আগেই যাচাই করতে হবে। তারা নির্ভরযোগ্য কিনা বা তাদের সাথে যোগাযোগ করা সহজ কিনা তা তাদের অনলাইন বিল পেমেন্ট, গ্রাহক পরিসেবা এবং সামাজিক মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সহজেই যাচাই করা যায়।

৬। প্রিমিয়াম: বীমা সেবার প্রিমিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার! এটি আপনার আর্থিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।
কোন বীমা কোম্পানি যদি সাশ্রয়ী বীমা প্রিমিয়াম প্রদান করে তবে এর অর্থ এই নয় যে তাদের সার্ভিস ভাল হবে না। তাই, বীমা সেবা নেবার আগে বিভিন্ন কোম্পানির প্রিমিয়াম প্যাকেজ সম্পর্কে রিসার্চের মাধ্যমে ভাল ধারণা রাখতে হবে।

৭। কাভারেজ: একটি ব্যয়বহুল বীমা যে আপনাকে সবসময় বিস্তৃত কভারেজ সরবরাহ করবে এ ধারণা ভুল। এ কারনে আপনার বীমা কোম্পানির বীমা কভারেজ রেঞ্জ সম্পর্কে জানতে হবে। আপনার আর্থিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সেরা কভারেজটি পছন্দ করুন যাতে এটি আপনার এবং আপনার পরিবারের বাজেটে কোন সমস্যা না করে।

৮। সম্পুর্ন ডিসক্লোজার: যেসব বীমা কোম্পানি আপনাকে তাদের পলিসি ও শর্ত সম্পর্কে অন্ধকারে রাখে সেসব কোম্পানি থেকে দূরে থাকাই উত্তম। বীমা সেবা নেবার আগে নিশ্চিত করা দরকার যে সংস্থাটি সম্পূর্ণরূপে তাদের সমস্ত আইনি এবং আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা এবং শর্তাবলী আপনাকে পরিষ্কার করে জানিয়েছে। একটি ভাল বীমা তাদের আইনি এবং আনুষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে সবসময় গ্রাহকের কাছে স্বচ্ছ থাকবে।

৯। ডিসকাউন্ট: ডিসকাউন্ট আপনার বীমা সেবা নেবার ক্ষেত্রে হয়ত কিছুটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে আপনার বীমা সেবায় কী ধরণের ডিসকাউন্ট কাজ করবে সে সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত। আমাদের দেশে প্রিমিয়ামের উপরে কখনই কোন ডিস্কাউন্ট প্রদান করা হয় না। তবে বীমা কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপে জড়িত অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন হোটেল, শপিং মল, রেস্টুরেন্টসহ নানান প্রকার প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে ডিস্কাউন্ট অফার করা হতে পারে। তবে, এ সকল ডিস্কাউন্টে বিহ্বল না হয়ে বীমা কোম্পানির অন্যান্য বিষয় যেমন প্রিমিয়ামের দিকে খেয়াল রাখা উচিত।

১০। বীমা ক্লেইম পেমেন্ট: বীমা কোম্পানির বীমা ক্লেইম পেমেন্ট রেকর্ড সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। একটি কোম্পানির বীমা ক্লেইম পেমেন্টের আগের রেকর্ড সম্পর্কে পর্যাপ্ত খোঁজখবর নিতে হবে। নির্ভরযোগ্য যেকোন বীমা কোম্পানির বীমা ক্লেইম রেকর্ড অত্যন্ত ভালো থাকে। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্লেইম পরিশোধ করা কোম্পানি বাছাই করা উচিত।

১১। পরামর্শ নিন কাছের মানুষের কাছ থেকে: আপনার পরিবার কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকেও বীমা কোম্পানি সম্পর্কে পরামর্শ নিতে পারেন। তারা তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বীমা সেবা ও কোম্পানি সম্পর্কে আপনাকে পরামর্শ সরবরাহ করতে পারে। সঠিক বীমা বাছাই করার ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে নেয়া পরামর্শ অত্যন্ত মূল্যবান হবে।

১২।দূরত্ব ও সম্পর্ক নয়, সিদ্ধান্ত নিন সঠিক বিবেচনায়: অনেক সময় কোম্পানির অফিসের দূরত্ব কিংবা বীমাকর্মীর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে অনেকে বীমা করে থাকেন, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।বীমা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, এখানে আবেগের চেয়ে সঠিক বিবেচনাকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত।জানাশোনা, বোঝাপড়া ও সঠিক বিবেচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।সেক্ষেত্র সঠিক বীমাকর্মী যদি অনেক দূরেও অবস্থান করেন সেটা কোন ব্যাপার নয়।তাছাড়া এখন শীর্ষ বীমা কোম্পানিগুলো সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজড।আপনি সঠিক বীমা কর্মীর মাধ্যমে সে কোম্পানির যে কোন শাখায় পলিসি করে আপনার সুবিধা অনুযায়ী সেই কোম্পানির যে কোন শাখায় পলিসি জমা দিতে পারবেন।এমনকি ঘরে বসে মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে ডিজিটাল সার্ভিসের মাধ্যমেও পলিসি জমা দিতে পারবেন।

সুতরাং দূরত্ব ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, বীমা করুন সঠিক কোম্পানি ও সঠিক বীমাকর্মী বা পরামর্শকের মাধ্যমে।

No comments:

Post a Comment