Saturday, November 23, 2019

এক নজরে শীর্ষ ৬টি জীবন বীমা কোম্পানির অবস্থা

বীমা বার্তা ডেস্ক:বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো কোম্পানি আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিঃ বা সংক্ষেপে আলিকো।এই আলিকোরই একটি শাখা মেটলাইফ।তবে ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আলিকো কর্মরত থাকলেও এরপর থেকে দৃশ্যপটে দেখা যায় মেটলাইফকে।যাইহোক, আমেরিকান এই কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসা করছে ১৯৫২ সাল থেকে।সে হিসেবে এই কোম্পানির বয়স দাঁড়িয়েছে ৬৭ বছর।এই দীঘ সময়ে কোম্পানিটি  শহরাঞ্চলে তাদের ব্যবসার পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি ১ম বছর প্রিমিয়াম অর্জন করেছে ৫৫০ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা এবং আগের বছর এই খাতে অর্জন ছিল ৫৩৮ দশমিক ৬৭ কোটি টাকা।২০১৮ সালে গ্রস প্রিমিয়াম অর্জন করেছে ২৬৬৪.১০ কোটি টাকা।তবে ব্যবসার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি সফল হলেও এই বিদেশি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হচ্ছে ব্যবসায়ের অসচ্ছতা। তারা গ্রাহকদেরকে ঠকিয়ে থাকে এবং বীমা দাবি পূরণে গড়িমসি করে।তারা গ্রাহকদেরকে কী ধরনের বোনাস সুবিধা প্রদান করবে বা করে থাকে তা গোপন রাখে।বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব কোন সম্পদ নেই, লাভের পুরো টাকাই আমেরিকায় চলে যায়।সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষ (IDRA) গ্রাহকদের বীমা দাবীর নিষ্পত্তি না করার কারণে যে ১৪টি কোম্পানির নাম তালিকাভুক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে তাদের মধ্যে মেটলাইফও রয়েছে।
জীবন বীমা কর্পোরেশন (জেবিসি) বাংলাদেশের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা কোম্পানি, যা ১৯৭৩ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় রাষ্ট্রপতির আদেশে সুরমা ও রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশনকে একত্রিত করে জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে হিসেবে প্রথম প্রজন্মে এই কোম্পানির বয়স সাড়ে ছিচল্লিশ বছর। কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণ হলো - ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে ২১০৭.৩৮ কোটি টাকা।২০১৭ সালে সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২০৩০ কোটি টাকা।২০১৮ সালে লাইফ ফান্ড ছিল ১৯২৮ দশমিক ৯৮ কোটি টাকা যা আগের বছর ছিল ১৮৫২ দশমিক ২৯ কোটি টাকা।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড ১৯৮৫ সালে যাত্রা শরু করে। বর্তমানে কোম্পানির বয়স ৩৪ বছর।২০১৮ সালের হিসেব অনুসারে ন্যাশনাল লাইফের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪২৭৬.৬৮ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে সম্পত্তি ছিল ৪১০৮.৪৫ কোটি টাকা।লাইফ ফান্ড ২০১৮ সালে ৩৪৪০.৩৭ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ছিল ৩২৯০.৭৭ কোটি টাকা।কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম অর্জন করে ২৫০.৫৩ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ২১৭.৪৭ কোটি টাকা।এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল ২০১৮ সালে ১১০.২৫ কোটি এবং আগের বছর ছিল ৮৩.৬০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি গ্রস বা মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ৯৬১.৯১ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল ৮৭১.১১ কোটি টাকা।

প্রথম প্রজন্মের দ্বিতীয় কোম্পানি হিসেবে ডেল্টা লাইফ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালে।সে হিসেবে কোম্পানিটির বয়স ৩৩ বছর।২০১৮ সালে ডেল্টার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪৩৯৮.৭৮ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪৩৭৩ কোটি টাকা।প্রবৃদ্ধি ২৫.৫৪ কোটি টাকা।লাইফ ফান্ড (২০১৮ সালে) ৩৮২৮.৮৯ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ৩৬৭৪.২২ কোটি টাকা।বিগত বছরে কোম্পানিটির ১ম বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল১৩৯.৫১ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালে ছিল ১৩১.৬৭ কোটি টাকা।দ্বিতীয় বর্ষ প্রিমিয়াম ছিল ২০১৮ সালে ১০৯.১৯ কোটি টাকা যা ২০১৭ সালে ছিল মাত্র ৭৭.৮১ কোটি টাকা।কোম্পানিটি ২০১৮ সালে গ্রস প্রিমিয়াম অর্জন করেছিল ৬৬৪.০০ কোটি এবং ২০১৭ সালে ৬২৫.১০ কোটি টাকা।

উপরোক্ত চার কোম্পানির তুলনায় প্রগতি লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ ও পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বয়স তুলনামূলকভাবে অনেক কম।এই চারটি কোম্পানিই প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে।প্রগতি জানুয়ারীতে, ফারইস্ট মে মাসে, প্রাইম জুলাই মাসে এবং পপুলার সেপ্টেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়।তবে ব্যবসায়িক অগ্রগতির দিক থেকে দেশীয় সকল কোম্পানিকে ছাড়িয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, ন্যাশনাল লাইফ, পপুলার লাইফ ও ডেল্টা লাইফ।

দেশিয় ৩২টি লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। আগের বছরেও কোম্পানিটি ১ হাজার ১২ কোটি ৪ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে শীর্ষ অবস্থানে ছিল। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ৩৪৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে দ্বিতীয় অবস্থানে, ২য় বর্ষ প্রিমিয়ামে (১৯৫.১৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করে) প্রথম অবস্থানে, লাইফ ফান্ডের দিক থেকে ৩য় অবস্থানে (৩৩৩০.৪৩ কোটি) এবং সম্পদের দিক থেকেও ৩য় অবস্থানে রয়েছে কোম্পানিটি।২০০৫ সালে পূঁজিবাজারে তালিকাবদ্ধ হয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই প্রথম থেকেই এ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে এবং শেয়ার হোল্ডারদেরকে নিয়মিত আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ট দেয়ার পাশাপাশি পলিসি হোল্ডারদেরকেও নিয়মিত আকর্ষণীয় বোনাস দিয়ে আসছে। পূঁজিবাজারে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৭৪.৭৪২ কোটি টাকা।২০১৮ সালে লাইফ বীমায় কোম্পানিটির মার্কেট শেয়ার ১১.৭৪ শতাংশ, আর প্রবৃদ্ধি ৪.৬২ শতাংশ। কোম্পানির আর্থিক ভীতও অত্যন্ত শক্তিশালী।মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪২০৫.৫৬ কোটি টাকা।

অন্যদিকে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহে শীর্ষ অবস্থান দখল করেছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ৫৫৯ কোটি ৬ লাখ টাকা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। এর আগে ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ২৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে। অর্থাৎ নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহে কোম্পানিটির প্রবৃদ্ধি ১০২.৮৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে পপুলার লাইফ ৮০৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা গ্রস প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৬০.৪২ শতাংশ।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকের তথ্যের ভিত্তিতে লাইফ বীমাকারীর ব্যবসার দক্ষতা মূল্যায়ন শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।






No comments:

Post a Comment